মাতৃ মন্দির সাংস্কৃতিক সংঘ তৃতীয় বৎসরে পা দিলো, কিছু সুন্দর মনের মানুষের সুন্দর কিছু করার অভিপ্রায়ে সৃষ্টি ও সরকারিভাবে নিবন্ধন হয় মাতৃ মন্দির সাংস্কৃতিক সংঘের। সদস্যদের নিষ্ঠা ও অক্লান্ত পরিশ্রম, শুভাকাঙ্ক্ষীদের অবিরত ভালোবাসায় মাতৃ মন্দির আয়োজন করে চলেছে বিভিন্ন সামাজিক ও ধর্মীয় উৎসবের, যার মধ্য দিয়ে বাঙ্গালী ও প্রাচীন ভারতীয় ঐতিহ্য, সংস্কৃতি ও দর্শনের সাথে পরিচিতি ও সমন্বয় ঘটছে জার্মান তথা পাশ্চাত্য ঐতিহ্য, সংস্কৃতি ও দর্শনের। শ্রীরামকৃষ্ণ পরমহংসদেব যেমন বলেছেন, “যত মত তত পথ”, আমরাও সেরকমই বিশ্বাস করি যে, সকল মতের সকল পথের প্রতি শ্রদ্ধা ও মিলনেই অবসান ঘটবে ব্যক্তির সাথে ব্যক্তির, সমাজের সাথে সমাজের, দেশের সাথে দেশের, ধর্মের সাথে ধর্মের, সংস্কৃতির সাথে সংস্কৃতির নানামুখী সংঘাতের। আমরা স্বপ্ন দেখি ঘৃনামুক্ত সেই সমাজের, যেখানে ভালোবাসাই হবে যেকোনো দুর্যোগ, বিপদ, সংঘাত, অরাজকতা থেকে মুক্তির পথ। “আমরা সবাই রাজা, আমাদেরই রাজার রাজত্বে” গানটিতে গুরুদেব রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর সেই মৌলিক শিক্ষাই আমাদের দিয়েছেন। আমরা বিশ্বাস করি গুরুদেবের সেই বানী দেশে দেশে, সমাজে সমাজে, রাজা ও প্রজার সম্পর্কে এখন আরও বেশিভাবে প্রাসঙ্গিক।
দুর্গাপূজা উৎসব ভারতীয় উপমহাদেশের বৃহত্তম সর্বজনীন উৎসবগুলির মধ্যে একটি। মাতৃ মন্দির সাংস্কৃতিক সংঘ সেই সর্বজনীনতাকেই ধারন করে, যেখানে বিশ্বভাতৃত্ববোধ ও মানবতা ছাপিয়ে যায় ব্যক্তি, পরিবার, সমাজ, দেশ, ধর্মের গন্ডীকে। সকল ধর্মের, বর্ণের মানুষের মহামিলন মেলায় আসলে আমরা সেই মাকেই স্মরণ করি যিনি যুগ যুগ ধরে তার সমস্ত শক্তি দিয়ে , ভালোবাসা দিয়ে দেশে দেশে মানব সভ্যতাকে অটুট রেখেছেন, ধরণীকে রেখেছেন বাস যোগ্য করে। আমরা সেই মাকে পূজা করি, যিনি পৃথিবীর প্রতিটি ঘরে ঘরে দুই হাতে মা দুর্গার দশ হাতের শক্তি দিয়ে, ভালোবাসা দিয়ে তার সন্তানদের, পরিবারের সদস্যদের সকল বিপদ আপদ থেকে, অশান্তি থেকে রক্ষা করে চলেছেন। দুর্গাপূজা তাই দুহাতি মায়ের মাঝে দশভুজা মায়ের শক্তি ও ভালবাসাকে উপলব্ধির উৎসব, বাংলার কবি কাজী নজরুল ঠিক যেভাবে মায়ের অপেক্ষা করেছেন,
আমার আনন্দিনী উমা আজো এলো না তার মায়ের কাছে।
হে গিরিরাজ! দেখে এসো কৈলাসে মা কেমন আছে।।
দুর্গাপূজা উৎসবে আমরা তাই সেই মাকে অঞ্জলী দেই, যেন আমরা সত্যের পাথে থাকতে পারি, অহঙ্কার প্রলোভনে যেন ডুবে না যাই, উৎসবের প্রাচুর্যে যেন ভুলে না যাই অন্তরাত্মাকে, শ্যামা সঙগীতিতে সুরে আমরাও গাই,
আমার মায়ের পায়ের জবা হয়ে ওঠ না ফুটে মন,
তার গন্ধ না থাক যা আছে সে নয়রে ভুয়ো আভরণ॥
মাতৃ মন্দির সাংস্কৃতিক সংঘের পক্ষ থেকে সবাইকে শারদ শুভেচ্ছা। সবার জন্য রইল সবার শারদীয় নিমন্ত্রণ।